বিস্বাস part:1

বিশ্বাস (একটি প্রেম ও বিরহের গল্প)



১ ধানমন্ডি লেকের ধারে বসে ঝগড়া করছে মিঠু আর নাসরিন। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি।
মিঠু আর নাসরিন এক সাথে পড়ে। দু জন-ই আমার ভাল বন্ধু।
কাঁটায় কাঁটায় তিরিশ মিনিট হল ওরা ঝগড়া করছে। আমি এসেছি ওদের ঝগড়া মেটানোর জন্য। আগের দিন ফোন করে এখানে আসার কথা বলেছিল নাসরিন। কিন্তু দু জনকে থামিয়ে দিয়ে সব মিলিয়ে এখনো পাঁচটা কথা বলতে পেরেছি কিনা সন্দেহ।
নাসরিন মেয়েটা সুন্দরী।সাদামাঠা একটা ড্রেস পরে এসেছে। মুখেও তেমন একটা মেকাপ নেই। চোখে সামান্য একটু কাজল, আর ঠোঁটে লিপস্টিক।
মিঠু কালো হলেও তার মধ্যে এমন একটা ম্যানলি ব্যাপার আছে যে, কোন মেয়ে একবার দেখলে আগ্রহ নিয়ে তার দিকে দ্বিতীয়বার তাকাবে।
"তুই-ই বল রাহাত" আমার দিকে তাকিয়ে বলল নাসরিন; "ওর মত মিথ্যুক আর ইরেস্পন্সিবল ছেলে তুই তোর জীবনে দেখেছিস?"
"তোদের ঝগড়ার মধ্যে আমাকে টানছিস কেন"
"ওমা এ কী কথা তোকে এখানে আসতে বললাম কেন?"
"যে কাজের জন্য আসতে বলেছিস তা তো তোরা নিজে নিজে-ই কী সুন্দর সমাধান করছিস!"
"তুই আবার রাগ করছিস কেন?" মিঠু বলল; "আচ্ছা থাক এখন বল আমাদের মধ্যে কার দোষ বেশি আর আমাদের কার কি করা উচিত?"
আমি বল্লাম,"প্রথমে নাসরিন বল, ঘটনাটা কি হয়েছে? তারপর মিঠু বলবি। ওকে?"
"ওকে!" বলল দু জন-ই।
"ঘটনা হচ্ছে" নাসরিন বলতে শুরু করল,"তুই তো ইরাকে চিনিস? ওই যে লম্বা মত ফর্সা মেয়েটা?"
হ্যাঁ হ্যাঁ চিনেছি বল"
"ওই মেয়ের সাথে ও কাল সারারাত গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করেছে"
"মিথ্যা বলছে ও" মিঠু বলল, "আমি মোটেই ওর সাথে কথা বলিনি;আমি আমার ফুফাত ভাই রিয়াদের সাথে কথা বলেছি"
"এত বড় মিথ্যা কথা!" চেচিয়ে উঠল নাসরিন "আল্লা সইবেনা"
"এই তো আবার শুরু করেছিস" বিরক্ত হলাম আমি; "আমি তাহলে চলে যাচ্ছি।
"না! না! না!" দু জনই বলে উঠল "আর করবনা"
"আচ্ছা নাসরিন" বললাম আমি "তুই কি করে বুঝলি ও কাল ইরার সাথে কথা বলেছে?"
"কাল ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ওর ফোন বিজি ছিল"
"এতেই কি প্রমান হয়ে যায় যে আমি ইরার সাথে কথা বলেছি?" প্রতিবাদ করল মিঠু
"মিঠু তো ঠিকই বলছে এতে তো তা প্রমান হয়না"।
"আমার কাছে প্রমান আছে রাহাত" ওর কন্ঠটা হঠাৎ খুব শান্ত শোনাল।
"তাহলে বল কি প্রমান?"
"আমি তা বলতে পারবনা" গলাটা কেঁপে উঠল ওর। তারপর না জানি কি হল। দু হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করল। বিব্রত বোধ করলাম খুব। মিঠুর চেহারা-ও খেয়াল করলাম চেঞ্জ হয়ে গেছে। অপরাধবোধের কালো একটা ছায়া নেমে এসেছে ওর চেহারায়।
বুঝতে পারলাম মিঠু আর নাসরিনের আজকের ঘটনটা ঝগড়ার অন্যান্য দিনগুলোর মত নয়। ওরা প্রচুর ঝগড়া করে ঠিকই তবে তা কখনো রিলেশন ব্রেকের মত ব্যাপার নয়। কিন্তু নাসরিনের এই কান্না আর মিঠুর অপরাধীর মত ওই কালো মুখ তাদের সম্পর্কের মধ্যে ফাটলের পূর্বাভাস বলেই মনে হচ্ছে।
"নাসরিন শোন" কান্নার বেগ একটু কমে আসাতে বললাম আমি "তুই আমাকে ঘটনাটা পুরো খুলে বল নইলে আমি তোদের কোন সমাধান দিতে পারছিনা।"
"কোন সমাধান নেই রাহাত! ওর সাথে আমার সম্পর্ক রাখা সম্ভব না।"
"কিন্তু কেন?"
"ও একটা বেঈমান,মিথ্যুক, বিশ্বাসঘাতক"
"বিশ্বাসঘাতকতার কি করল সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।"
হঠাৎ করে নাসরিন এক ঝটকায় উঠে দাঁড়াল- "আমি চলে যাচ্ছি রাহাত"
"ওমা সে কী! কোন কথাই তো বলা হয়নি"
"আর কোন কথা নেই রাহাত আর কোন কথা নেই! ওকে বলে দিস অন্তত বৌএর সাথে যেন এ ধরনের বেঈমানী সে না করে"
হন হন করে হাঁটতে শুরু করল ও। এতক্ষন চুপচাপ ছিল মিঠু।এবার উঠে দাঁড়াল। বলল "প্লীজ নাসরিন প্লীজ । আমি ক্ষমা চাচ্ছি, ভুল হয়ে গেছে আমার। আর কখনো হবেনা। প্লীজ তুমি যেয়োনা। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে । প্লীজ যেয়োনা। আমি বুঝতে পারছি আমি অন্যায় করেছি।"
নাসরিন হেঁটেই চলেছে। পিছন পিছন মিঠু। আমি হতভম্ব হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে যেখানে ছিলাম সেখানেই বসে রইলাম।

রাত নয়টা। ফোনে কথা বলছি আমি আর নাসরিন। এর মধ্যে আমার সব ঘটনা জানা হয়ে গেছে। ঘটনা সামান্য না।
নাসরিনের এক কাজিনের বিয়েতে সে আবিষ্কার করল ইরা তাদের বেশ কাছের আত্বীয়। একই ভার্সিটিতে পড়ার কারনে আগেই সামান্য পরিচয় ছিল ওদের মধ্যে। তবে ইরা দু ব্যাচ জুনিয়র। আত্বীয় সূত্রে আবদ্ধ হবার পর এদের মধ্যে ঘনিষ্টতা আরো গাঢ় হল।
ঘটনাটা গতকালের।নাসরিন বেড়াতে গিয়েছিল ইরাদের ওখানে। সারা রাত একসাথে ছিল। এ কথা সে কথার পর মিঠুর কথা উঠল।সব কিছু বলল ইরাকে ও। এক পর্যায়ে ইরা বলল, "ছেলেদের বেশি বিশ্বাস করোনা আপু, ওরা খুব খারাপ!"
"মিঠু ওরকম ছেলেই নয়"
আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিল ও। তারপরই একটা চ্যালেঞ্জ করে বসল মেয়েটা; বলল, "তুমি চাইলে এখনই তার প্রমান দিতে পারব আমি। তুমি ওই ছেলের ফোন নাম্বার দাও,তোমার সামনেই কথা বলি;দেখ কি বলে তোমার ওই ভাল ছেলেটা"।
এ ধরনের একটা ব্যাপারে ও জড়াতে চায় নি। কিন্তু কি আর করা। আত্মসম্মানবোধের কারনে ও বাধ্য হল ইরাকে মিঠুর ফোন নাম্বার দিতে। তারপর যা ঘটার তাই ঘটল।

Comments

Popular posts from this blog

তুমি...!

উদ্দান